কাবাব পার্টি করার
ইচ্ছা আমাদের অনেকদিনের।বন্ধুদের মধ্যে এরকম আরো কিছু ইচ্ছা সারাবছর গল্পের অনেকটা
অংশ জুড়ে থাকে।বন্ধুরা সবাই একসাথে হলে যেগুলোর কেবল প্লানই হয়।বাস্তবায়ন হয় না।কাবাব
পার্টি করা এরকম আমাদের একটা অনেক আকাঙ্খিত শখ।বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে সবার
আর্থিক সঙ্কটই মুখ্য।তাই কয়েকদিন আগে প্লান হল কোন টাকা ছাড়া কিভাবে কাবাব পার্টি
করা যায়।টাকা ছাড়া কাজ হবে আর মুকুলের শরনাপন্ন হব না এমনটা কখনই হতে পারে না।তার
মাথায় সবসময় কিছু প্লান রেডি করা থাকে টাকা বাচানোর বিকল্প পথ হিসেবে।তার প্লান
গুলো অভিনব।মাসের শেষে যখন আমার পকেটে টাকা থাকে না তখন মুকুল এর সাথে হোটেলে যাই
তরকারি কিনতে। দুজন
মিলে হাফ করে ভাগাভাগি করে নিয়ে হলের ক্যান্টিনে বসে আরামচে উদরপুর্তি করি আনলিমিটেড ভাতে।মাসের শেষে সিগারেট কেনার টাকা
না থাকলে সারা মাস ধরে জমানো সিগারেটের পশ্চাৎদেশের স্বাদ আহরণও তার কাছ থেকেই
শিখেছি।মুকুল যেন এক আশার নাম।এবারো আমাদের নিরাশ করল না মুকুল।তার কাছ থেকে দুইটা
প্লান পাওয়া গেল।প্রথম প্লানটা হল এলাকার বড় ভাইদের সাথে নিয়ে করা।তাতে করে খরচটা
তাদের ওপর দিয়েই যাবে আমাদের শুধু পরিশ্রম।প্লানটা কারো পছন্দ হল না।আমাদের
পার্টিতে বড়ভাই দের রাখব কেন? তার দ্বিতীয় প্লান হচ্ছে আগামী কুরবানী ঈদে কাবাব
পার্টি।তখন আলাদা করে গোস্ত কিনতে হবে না।সবার বাসাতেই গোস্ত
থাকবে শুধু বানানোর কৌশল টা জানার বিষয়।সেদিক থেকেও আস্বস্ত করল মুকুল।সে নাকি
চেস্টা করলেই কাবাব বানিয়ে ফেলতে পারে।একবার চেস্টা করে খিচুরি রান্না করে অনেক
প্রশংসা কামিয়েছিল।
-আরে ধুর কুরবানী আসতে
আরো কম করে হলেও পাঁচ মাস বাকি।এতদিন দেরী করা যায় নাকি।
হটাৎ করে আলেক প্রতিবাদ
জানায় মুকুলের প্রস্তাবে।
-দুই বছর ধরে তো শুধু
প্লানই করে যাচ্ছিস।করতে পেরেছিস আজো?পাঁচ মাসে আর কি হবে যদি করতে পারি কি বলিস
রাকু?
রাকু আমাদের মধ্যে
সবচেয়ে উদ্যোগী ছেলে।সে বারবার সবাই কে উৎসাহিত করতে করতে এখন নিজেই উৎসাহ হারিয়ে
ফেলেছে।সে ধরে নিয়েছে এটাও প্রতিদিনের মত নিছক একটা প্লান ছাড়া কিছু নয়।মিনমিনে
কন্ঠে তাই সে জানায় “ঠিকই তো”।এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে পৌছে সবকিছু সেদিনের জন্য
সমাপ্ত হল।দীর্ঘ পাঁচ মাস পরে সেই কাঙ্খিত দিনটি আসল।সবার ঘরে ঘরে কুরবানী জবাই হল।গোস্তের অভাব নেই। পাঁচ
মাসের বিরতিতে কাঙ্খিত অনেক জিনিসই অনাকাঙ্খিত হয়ে ওঠে।অনেক প্রিয় জিনিস হয়ে ওঠে
অপ্রিয়।নিত্য আলোচ্য বিষয় চাপা পরে যায় নতুন ঘটনায়। সবাই মনে হয় তাই ভুলতে বসেছিল
আমাদের সেই কাঙ্খিত কাবাব পার্টির কথা কিন্তু রাকু ভোলার পাত্র নয়।ঈদের দিন বিকেলে
ওর সাথে দেখা হতেই কাবাব পার্টির কথা আবার ও তুলল। এবার ও সত্যি সত্যিই করে ফেলবে
কাবাব পার্টি।কেউ না করলে একা বাসার ছাদে করবে এমনটা হুমকিও দিতে থাকে।তাই তাকে
আস্বস্ত করা হল আগামী কালই করা হবে আমাদের কাবাব পার্টি।রাজুদের গ্রামের
বাসায়।রাজু আমাদের আরেকজন বন্ধুবর।গম্ভীর প্রকৃতির।আগেও নাই পাছেও নাই।সবকিছুর
মাঝখানে তার ভুমিকা।উৎসাহ নাই নিরুৎসাহও নাই।বল্লে করবে না বললে করবেনা এমন
প্রকৃতির।তবে সে সাথে থাকলে একটা অন্য মাত্রা যোগ হয় বন্ধুদের আড্ডায়।গল্প বলায়
পটু।সাধারণ গল্প অসাধারণ করে উপস্থাপন করতে রাজুর দ্বিতীয় কেউ নেই।হাঁটতে হাঁটতে
সেন্ডেল ছিঁড়ে গেল তো গার্ল ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে গালি শুরু।অকথ্য ভাষায় গালি।
-তোরে আমি আমার ছেড়া
সেন্ডেল দিয়ে থাপরাবো হারামজাদী।
ওপাশ থেকে শান্ত কন্ঠ
-তোমার সেন্ডেল বুঝি
ছিঁড়ে গেছে।তো ঠিক করে নিলেই হয় বাবু।
তখন আমাদের হাসি আর
থামায় কে।আমাদের হাসিতে রাজু আবার গালিগালাজ শুরু করে।সবার আগে ও ছুটিতে
আসে।ভার্সিটি ছুটি হবার আগেই।তারপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।তার গ্রামের বাসা
খুজে বের করার দায়িত্ব নেয় আলেক।আলেক ওর স্কুলফ্রেন্ড।স্কুলে থাকতে প্রথম পরিচয়ে
আলেকের ডায়েরিতে ওর গ্রামের বাসার ঠিকানা লিখে দিয়েছিল।পুরোনো দিনের ডায়েরী খুঁজে
পাওয়া মুশকিল।তবে আলেক ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়।অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার দাদীর পুরনো
চৌকির নিচে ডায়েরীর অস্তিত্ব আবিষ্কার করে।সেখানে স্পষ্ট রাজুর লেখা-
নামঃ মোঃ আসিফুজ্জামান
রাজু
পিতার নামঃ মোঃ তারেক
হাসান
মাতার নামঃ মোছাঃআছিয়া
খাতুন
গ্রামঃপালিকান্দা,পোস্টঃসিহালীহাট,থানাঃশিবগঞ্জ,জেলাঃবগুড়া
রাজধানীঃঢাকা,বাংলাদেশ।
পেন্সিল দিয়ে মোটা মোটা
লেখা।সেটাই ছিঁড়ে পকেটে গুজে রাখে আলেক।
অইদিন আর কোন প্লান হয়
না।পরেরদিন বিকেলে সবার বাসা থেকে এক কেজি
করে গোস্ত নিয়ে রওনা হলাম রাজুর গ্রামের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।সি এন জি অটোরিক্সা
ভাড়া করা হল।রিজার্ভ।সবাই অনেক খুশি শুধু মুকুল বাদে।ওটোরিক্সা ভাড়া তার কাছে বেশি
মনে হয়েছে।সে দুই তিনবার সেটা বলেছে।কেউ তার কথায় কান দেয় নি।হলে হয়েছে।প্রতিদিন
তো আর যাচ্ছিনা।সূর্যাস্তের
বেশি দেরি নেই।আকাশ লাল হতে শুরু করেছে।চারপাশে যতদূর চোখ যায় শুধু বিস্তৃত মাঠ আর
মাঠ।দূরে
অচেনা গ্রামগুলো আবছা ছবির মত লাগে।তারি মাঝখান দিয়ে অচেনা পথে ছুটে চলেছে সি এন জি অটোরিক্সা।গতি বেশি নয়
আবার ধীরও নয়।মৃদুমন্দ হাওয়া এসে লাগছে গায়ে।একটু শীত শীত হাওয়া।অন্যরকম এক
রাজ্যের ছবি চোখে ভাসছে সবার।এরকম অনেকদিন বাইরে বের হওয়া হয় না সবাই মিলে।জড়তা
থেকে মুক্তির একটা স্বাদ।সবাই চুপচাপ।শুধু মুকুল গুনগুন করে কি যেন গান গেয়ে
যাচ্ছে।নিরবতা ভেঙ্গে হটাৎ রাকু বলল
-রাজু তো জানে না আমরা
তার গ্রামের বাসায় যাচ্ছি।একটা সারপ্রাইজ এর মত হবে তাইনা?
মুকুল গান থামিয়ে বলে সারপ্রাইজ
না বাল হবে।ও বেটা আমাদের গোস্ত দিয়ে
রেজালা করে আমাদের খাওয়াবে।কাবাব পার্টি
করতে পারিস নাকি সেটা আগে দেখ।
রাকু-যদি না করতে দেয়
আমরাও কি ছাড়ব নাকি?জুতো মারব শালার গালে।
আলেক-তারপর রাতে থাকবি
কোথায়?তোর কাপড় যদি রাতে লুকিয়ে রাখে পরেরদিন তো নেংটো হয়ে বাসায় আসতে হবে।
রাকু-ভাল কথা
বলেছিস।শালা যে ধুরন্দর সবকিছু করতে পারে।
কথা বলতে বলতে আমরা সেই
পালিকান্দা গ্রামে পৌছলাম সন্ধ্যার পরে।মুকুল আগে নেমেই একটা লোকের সাথে কথা বলতে
শুরু করল।পরে জানতে পারলাম লোকটা রাজুর বাবা।মুকুল আগে দেখেছে রাজুর সাথে।ভাড়াটা
রাজুর বাবা পরিশোধ করবে আমরা তাই ধরে নিয়েছিলাম।কিন্তু একি বেটা কা বাপ।
ভাড়া তো দূরের কথা
আমাদের দিলেন এক ঝাড়ি।
তোমাদের বাবা মা কিছু
বলে না?বাসা থেকে এতদূর চলে আসছ।তাও রাতে থাকবে।বাসায় জানিয়ে এসেছ নাকি না জানিয়ে।
আমরা সবাই জানিয়ে
এসেছিলাম শুধু আলেক না জানিয়ে এসেছে।ও বলেছে আমার বাসার কথা।আমার বাসা ওর বাসার
পাশেই।তাই ও কিছুটা চুপসে গেল।তবে মুখে আমাদের সবারই হাসি।মনে মনে ভাবছি আল্লাহ
রেহায় দাও।
আঙ্কেল ও ছেড়ে দেবার
পাত্র নন।ঝাড়ি দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হলেন না।গ্রামে থাকার কিছু নিয়ম কানুন শিখে
দিলেন।যেমন সবাইকে লুঙ্গি
পরতে হবে।সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মাঠের ঠান্ডা হাওয়া লাগাতে হবে।ইত্যাদি।
আঙ্কেল এর কাছ থেকে
রেহায় পেয়ে আমরা পরলাম রাজুর হাতে।ওর অন্য মুর্তি।ওকি আমাদের বন্ধু রাজু নাকি
রাজুর জমজ।আমাদের প্রথম দেখে চিনতেই পারল না যেন।তারপর একটু দম নিয়ে
আমার গ্রামের বাসার
খোঁজ তোদের কে দিল?
আলেক সাথে সাথে পকেট
থেকে তার ছেঁড়া ডায়েরীর পাতা এই ভেবে বেড় করে দেখাল যেন রাজু খুশি হয় ছোটবেলার
স্মৃতি মনে পরে।তবে কাজ হল উল্টা।রাজু খুশি হওয়া তো দূরের কথা আলেককে গালি দিতে
শুরু করে দিল।
-শালা কোনদিন কে কোথায়
কি লিখে রাখছে সেটা যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছিস।পাপ করেছি আমি ওটা তোর ডায়েরিতে
লিখে এবার আমায় ক্ষমা কর।
তারপর মুকুলের দিকে কটমট করে তাকিয়ে
-তুই কেন আসছিস
বে?কিপ্টে কোথাকার।ঝোলায় আবার কি এনেছিস।
আলেক মুকুল দুজনেই
চুপসে গেল।
পরে তাকে সবাই মিলে
বুঝানো হল ঝোলায় আর কিছু নয় কুরবানীর মাংস। আমাদের অনেকদিনের কাবাব পার্টি করার
ইচ্ছা আজ এখানে সম্পন্ন করতে এসেছি।তার যদি সম্মতি থাকে।
-সম্মতি কি বে?এসেই
পরেছিস এখন না করলে তো বদনাম গাবি আমার নামে।
রাকু বিরবির করে কি যেন
বলল।আমি তার পাশে থাকায় কিছুটা বুঝলাম যার মানে এরকম
-বদনাম গাওয়ার মত আর
বাকি রাখলি কি তুই আর তোর বাপ?
ভাগ্যিস রাজু শোনে
নি।শুনলে হয়ত রাকু কাল সত্যি সত্যিই নেংটো হয়ে বাসায় ফিরত।কিছুক্ষণ পর আগের রাজুকে
আমরা ফিরে পেলাম।আমাদের আড্ডার মদ্যমণি রাজু।কোন কথায় যার মুখে বাধে না।কোন গল্পই
যার অজানা নয়।রাজু কাবাব বানানোর সমস্ত ব্যবস্থা করল।রাজুর মা নেই।ওর জন্মের
কিছুদিন পরেই উনি মারা যান।মা ছাড়া একটা সংসার কিভাবে চলতে পারে সেটা দেখার
বিষয়।সংসারের সবকিছু পুরুষালী কায়দায় গোছানো।যেটা যেখানে যখন দরকার সেটা সেখানেই
পরে থাকে।সোফায় হয়ত পাতিল রাখা,বাটি বলে কোন জিনিস দেখতে পেলাম না।যেই পাত্রে
রান্না হয় সেখান থেকেই খাওয়া।সবকিছু অপরিষ্কার।দরকারী জিনিস হাতের কাছে না থাকলে
যেটা পাওয়া যায় সেটা দিয়েই কাজ সারা হয়।এভাবে মধ্যরাত পর্যন্ত চলল কাবাব পার্টির
যোগার।মুকুল এর কথা মত মাংস ফালা ফালা করা হল।তার পর মশলা মিশিয়ে লবন পানিতে
চুবিয়ে রাখা হল।মাঝরাতে আমরা পাঁচ জন যুবক সবকিছু কাঁধে নিয়ে জ্যোসনায় প্লাবিত
মাঠের বুক চিরে হেঁটে চলেছি।কারো কাঁধে মাংসের বড় গামলা।কারো কাঁধে কোদাল আবার
কারো কাঁধে আটি বাধা জ্বালানীর কাঠ।মধ্যমাঠে আমরা সবাই সবকিছু নামিয়ে
রাখলাম।কার্তিকের রাত।আকাশ থেকে একটা চাঁদ সারা মাঠ আলো ছিটিয়ে দিচ্ছে।আমরা আলো
পিপাসু সেই আলো ধারণ করছি অঙ্গে।হিম হয়ে যাওয়ার মত পরিবেশ।চাঁদের আলোকে উপেক্ষা
করে রাজু কাঠগুলোতে কেরোসিন ঢেলে আগুনের ফুলকি তৈরি করল।কাবাব বানানোর জন্য কয়লা
দরকার সেইজন্যই কাঠ পোড়ানোর ব্যবস্থা।আগুনকে ঘিরে সবাই বসে পরলাম মধ্যমাঠে।তখনও
সারা মাঠে ধান।কিছু কিছু জমিতে কাটা হয়েছে।আমরা এরকম একটা জমি বেছে নিয়েছি।চারপাশে
পাকা ধানের মো মো করা গন্ধের সাথে চাঁদের অপরুপ আলোয় সারামাঠ কে যেন একটা ছবির
ফ্রেমে বেধে রেখেছে।যার মাঝখানে আমরা কয়েকজন আলোর দীশারি।কয়লা পাবার জন্য আগুনের
সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে বসে আছি।আগুনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখে নেশা
লাগে।স্বপ্নের মত মনে হয়।কারো মুখে কোন কথা নাই।নিরবতা ভেঙ্গে গান ধরল রাজু।তার
ভড়াট গলায় টানা টানা শুরে আগেও আমরা অনেকবার মুগ্ধ হয়েছি।আজ বিমোহিত হলাম
“সখী চাঁদরাতে যদি
তোমার ব্যথা জাগে মনে
কইয়ো গোপনে।
আমি তোমার ব্যথার
ভাগিদার”
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি
কয়লা জমে গেছে আগুনের নিচে।রাকু একটা কাঠ দিয়ে সেগুলো টেনে টেনে স্তুপ করল।মুকুল
তার কাবাব বানানোর নেট বের করে তার কৌশল প্রয়োগ করল।মাংস যখন পুড়ে একটা আলাদা
গন্ধে মাতিয়ে তুলছে চারিদিক তখন আবিষ্কার করলাম আমাদের ক্ষুদা।রাতে কিছু খাওয়া হয়
নাই।এখন মাঝরাত।পেটের মধ্যে হটাৎ চো চো করে উঠল।সবাই তাই আধা হওয়া কাবাবই মুখে
পুরতে শুরু করে দিল।আমি একটা তুলে মুখে পুরতেই বুক থেকে গলা পর্যন্ত তেতো হয়ে
গেল।লবন অতিরিক্ত পরেছে।সবাই সবার মুখ চাওয়া চাওই হল।মুকুল শুধু মুখ নিচের
দিকে।একটু চুপ করে থেকে মাঠের মাঝখান দিয়ে দিল এক দৌড়।সে ততক্ষণে বুঝে গেছে আমরা
তাকে ছাড়ছি না। তার পেছন পেছন আমরা সবাই দৌড়।ও বারবার বলে আসছিল চেস্টা করলেই ও
কাবাব বানাতে পারবে।আমরা সবাই ওর ওপরেই আস্বস্ত ছিলাম।শেষে গুরেবালি।রাজু মাংসগুলো
ধুয়ে আবার নতুন করে কাবাব বানাতে লেগে গেল।তাও কিছু হল না।যা নোনতা সেটাই থেকে
গেল।দুই বার তিনবার ধোয়া হল।মশলা সব ধুয়ে গেল তবু মাংসের ভেতরের লবন গেল না।
হতাশ হয়ে রাজু বলে বসল
-শালার লবন কোষে ঢুকে
গেছে।কম্প্রেশড করে বের করতে হবে।
আলেক নির্বাক।রাকু চোখ
গরম করে বিরবির করে যাচ্ছে।আমার পেট আর বাঁধা মানছে না।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে
না।করার কিছু নাই।মাংস পুরলেই নোনতা হয়ে যাচ্ছে আর তাছাড়া মশলা সব ধুয়ে গেছে।মাংসের
মধ্যে যা আছে তা শুধু লবণ। কাবাব
বানানোর চেস্টা তাই বৃথা।মুকুলের খবর নাই।মাঠের মধ্যে উধাও।পরিস্থিতি শান্ত হলে
মুকুল কোথা থেকে যেন হাজির হাতে একটা কাঁচের বোতল।কারো বুঝতে বাকি রইল না মুকুলের
ক্যালমা।সাথে সাথে মুকুলের ওপরে সবাই ঝাপ।কাবাব কি খাব।বোতলে এক চুমুক দিতেই মাথা
থেকে সব বের হয়ে গেল।ভাসছি যেন।আলেক প্রথমে খেতে রাজি হয় নি।রাজু ওকে জোর করে
খাইয়েছে।রাকু চিৎকার দিয়ে বলে উঠল
-মুকুল তুই আমার
সত্যিকার বন্ধু রে।আয় আমরা
আবার নতুন করে জন্ম নেই।
আলেক টলতে টলতে গান
ধরল। “আমি নেংটা ছিলাম ভাল ছিলাম,ভাল ছিল শিশু কাল
.............................................
আমি
আবার নেংটা হয়ে যাব”
রাজুর নেংটা হতে বেশি
সময় লাগল না।সাথে সাথে মুকুল,আলেক,রাকু,সবাই।পাঁচজন মধ্যমাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে
আছি।চাঁদের আলো আমাদের ধুয়ে দিচ্ছে।আমরা পবিত্র হচ্ছি।রাজু আবেগ আপ্লুত কন্ঠে
আমাকে বলে বসল
-মইন আমার গার্লফ্রেন্ড
কে তুই বিয়ে করিস দোস্ত।
আমি ভেবে পাই না।মাতাল
হলেও কি এমন প্রস্তাব করা যায়?
-তোর গার্লফ্রন্ড কে
আমি বিয়ে করতে যাব কেন।
-করবি মইন।তুই অনেক ভাল
ছেলে।আমার সাথে বিয়ে হলে ও সুখে থাকবে না।তুই ওকে সুখে রাখতে পারবি।
আগের বার যখন আমরা
মাতাল হই তখন আমি রাজু কে বলেছিলাম
-রাজু তোর
গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার বিয়ে দিবি?
সেই কথারই প্রতিফলন আজ
আবার।তবে অন্যভাবে।রাজু সিরিয়াস।তার গার্লফ্রেন্ড কে ও ভালবাসে তবে বিয়ে করবে না
আমরা সবাই জানি।ব্রেক আপ করার জন্য নানান কৌশল সে প্রতিদিন প্রয়োগ করে।কোন কাজ হয়
না।আজ কি বলছে রাজু আমাকে।এও কি সম্ভব?রাজু অদ্ভুত।এতটা অদ্ভুত আগে জানা ছিল না।
কিরে করবি?
নেশার ঘোরে উত্তর না
পাওয়া পর্যন্ত মাতাল রা প্রশ্ন করে যায়।তাই তাকে আস্বস্ত করলাম হ্যা করব।সেভাবেই
আমাদের রাত কেটে গেল মাঠের মধ্যে।পরের দিন কি ঘটেছিল সেটা কাবাব পার্টির বহির্ভুত
বিষয়।আমাদের কাবাব পার্টি সেই রাতেই পূর্ণতা পেয়েছিল।আমরাও পূর্ণ হয়েছিলাম।আমরা
কয়েকজন নতুন করে বন্ধুত্বের
বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম।কাবাব খেতে না পারলে কি হবে।কাবাব না খেয়েও কাবাব পার্টি
করা যায়।
২৩/০৮/২০১৫, রাজশাহী