মেয়েটা একা হেঁটে যাচ্ছে।এভাবে কখনও তাকে পাইনি। মেয়েটার সাথে কথা বলতে মন আকুপাকু করছে।কিভাবে বলব? কিভাবে বলতে হয়? মেয়েটাও কি আমার সাথে কথা বলবার পায়তারা করছে? হয়ত করছে। তবে তার বুঝতে বাকি নেই তার পেছন পেছন কেউ তার পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে ধীরে হাঁটছে? মেয়েটার হাঁটা তাই স্বাভাবিক নয়? একটু হেলেদুলে, একটু ধীরে, স্বাভাবিকের থেকে একটু নড়বড়ে। কৃষ্ণচূড়া পাতায় বাতাস যেভাবে ঢেউ খেলায়। তার চেয়েও মন্থর। না ভয়ে নয়।এখানে ভয় পাওয়ার কথা আসছে কেন?মেয়েটা আমাদের পাশের বাসায় থাকে। আমাকে দুই একদিন দেখেও থাকবে। পরিচিত রাস্তায় পরিচিত মানুষকে কি কখনো কেউ ভয় পায়? আবার পরিচিত রাস্তায় পরিচিত মুখও নারী মনে অন্যভাবে আসে।নারীদের যেন ভয় পেতে হয়। যেখানে ভয়ের কিছু নাই সেখানেও পেতে হয় যেখানে আছে আরো দ্বীগুন ভয় হয়। ভয় তারা শরীরে লালন করে। সহজাত ভয়। তবে মেয়েটা ভয় পাচ্ছে না। তার পা ফেলানোর মধ্যে দৃঢ়তা দেখেই বোঝা যায়।
মেয়েটাকে আমি প্রতিদিন দেখি। সবথেকে বড় কথা মেয়েটাকে আমি প্রতিদিন রাতে দেখি। বারান্দায়। আমার জানালা দিয়ে দেখি। অমাবস্যায় দেখি, চাঁদরাতে দেখি। ভোর রাতে দেখি গভীর রাতেও দেখি। হটাৎ হটাৎ বারান্দায় এসে একটু দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েটা আবার চলে যায়। কোনদিকে না তাকিয়ে আনমনে কার দিকে একটু দৃষ্টি স্থির রেখে আবার চলে যায়। অমাবস্যায় তার চোখে আমি জমাট অন্ধকারের গুমোট রাত্রির স্নিগ্ধতা দেখি। পূর্ণিমায় উচ্ছ্বল জ্যোস্নার প্লাবিত করা স্বচ্ছতা দেখি।মনে মনে কতবার তাকে প্রেম নিবেদন করেছি। তার হাত ধরে স্তব্ধ শহরে সারারাত ঘুরে ফিরেছি।মেয়েটা কি তার কিছু আঁচ করতে পারে। তার খোলা চুলে একদিন জোনাকির আটকে পরা দেখে আমি যে মাতাল হয়েছিলাম সে খবর কি মেয়েটা রাখে? একদিন গ্রীষ্মের মাঝরাতে তার কপালে লেপ্টে থাকা চুলে আমি কি দেখেছিলাম জানিনা। তারপর থেকে আমি কোন লেপ্টে থাকা চুল সইতে পারি না। তার গালে আমি চাঁদের আলোর খেলা দেখেছি। ঝরের রাতে ল্যাম্প পোস্টের আলোয় তার আঁচল উড়তে দেখেছি। মেয়েটাকে আমি কতভাবে দেখেছি কত ভাবে চেয়েছি। কে জানবে? তাকে লেখা চিঠি আমি এখনো শেষ করতে পারিনি। প্রতিরাতে সেই চিঠি আমি সম্পন্ন করছি।
“রাতের অধরা,
একদিন তোমাকে আমি নদী দেখাতে নিয়ে যাব। নদী মানে জানো? নদী হচ্ছে পাহারের কাছে চাওয়া সমুদ্রের ভালবাসা। সমুদ্র একদিন পূর্ণ ছিলনা। সমুদ্র ছিল হাহাকার করা মরুভূমি। আর পাহারের ছিল বুকে জমানো ভালবাসা। সমুদ্র একদিন পাহারের কাছে ভালবাসা চাইল আর অমনি পাহার তার জমানো ভালবাসা সমুদ্র কে দিতে শুরু করল। তাদের এই ভালবাসার সংযোগে তৈরি হল নদী। এই ভালবাসা চলবে যতদিন পৃথিবী বেঁচে থাকবে। ”ধুৎ কি লিখছি আমি? কেটে আবার লিখি।রাত গভীর হয়।অধরাকে কোন এক ফাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মেয়েটার সাথে আমার কথা বলা প্রয়োজন। তবে একটা সঙ্কোচ বাধা দিতে থাকে। মনের মধ্যে চাপা দন্দ্ব পথ আটকিয়ে দেয়। হাঁটার গতি স্লথ হয়। একটা পায়ের সাথে আরেক পায়ের দূরত্ব কমে আসে। চারপাশের খুদ্র খুদ্র জিনিস চোখে আটকা পরে। গা ঘামতে থাকে। এক সময় মেয়েটা রাস্তা ছেড়ে বাসায় ঢোকে।আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি।আর ভাবি অধরা আমার অধরা।
২৩।১০।১৩, বগুড়া
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন